ভালোবাসা দিবস ভালোবাসার বার্তা আনুক

নতুন সাজে আমরা সজ্জিত হই প্রেমের পরশ বার্তা আর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। মহান করুণাময়ের প্রেমধারা বইবার শক্তি আমার নেই। তাঁর যত প্রেম, ভালোবাসা আছে তা প্রতিনিয়ত আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। স্রষ্টার করুণাধারা মাথায় নিয়ে মানবতার কাজে জীবনের কিছু সময় অতিবাহিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা ভালোবাসা দিবস পালন করি। ভালোবাসার বারিধারায় সিক্ত হোক আমাদের এই পৃথিবী। সেই ভালোবাসা হোক মহান স্রষ্টার প্রতি, সেই ভালোবাসা হোক আর্তনাদ করা অসহায় মানুষের প্রতি। ফুলের দোকানগুলো থেকে নতুন ফুলের গন্ধে চারদিকে মুখরিত হয়। মৌমাছিগুলো এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন উপহার প্রদানের মাধ্যমে একজন আরেকজনের মন জয় করার চেষ্টা করেন।

স্নেহ, প্রীতি-বন্ধন, প্রেম আর কৃতজ্ঞতা-শ্রদ্ধায় গড়া আমাদের এ নিত্য। এগুলোকে যদি একশব্দে বাঁধি, তাকেই বলব ‘ভালোবাসা’। পিতামাতার প্রতি সন্তানের, সন্তানের প্রতি পিতামাতার, ভাইবোনের পারস্পরিক, স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কিংবা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অথবা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রিয়-প্রিয়ার এ যে হরেক রকমের সম্পর্ক সেটাই তো ভালোবাসা! কিন্তু ভালোবাসার জন্য কি বিশেষ কোনো দিনের দরকার! তারপরও পৃথিবীর প্রেমিক-প্রেমিকারা একটি দিন পালন করে আসছে। ভাব বিনিময়ের এই চিত্র আমার মাঝে বিভিন্ন প্রশ্নের সমাহার নিয়ে উপস্থিত হয়। খারাপ লাগে যখন পত্রিকার পাতায় দেখি প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাওয়া মেয়েটি তার প্রেমিক দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। প্রেমে সাড়া না পেয়ে কোনো যুবক যখন কোনো যুবতীর উপর এসিড নিক্ষেপ করে তখন আমি মর্মাহত হয়ে পড়ি। নিজেকে প্রশ্ন করি ভালোবাসা মানে কি ধর্ষণ? ভালবাসা মানে কি এসিড নিক্ষেপ?

ভালোবাসা দিবস আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমি ঘরের বৃদ্ধ মা বাবার প্রতি যত্ন করছি কিনা? নাকি আমার মা বাবা বৃদ্ধাশ্রমে রাত্রিযাপন করছেন।আমরা আমাদের মা বাবাকে ভালোবাসব। যে বাসায় অথবা যে বাড়িতে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকেনা সেখানে ভালোবাসার অভাবে সন্তানগুলো বিপদে পরিচালিত হবে। ভালোবাসা না পাওয়া সন্তানগুলো যে কোনো দুর্ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা প্রায় দেখি যে মেয়েটি সংসার করার জন্য স্বামীর বাড়িতে গিয়েছেন সেই মেয়েটি শ্বশুর বাড়ির অর্থলোভীদের অত্যাচার সইতে না পেরে এক বছরের মাথায় বাপের বাড়িতে চলে এসেছেন। গরীব এবং বয়সে অনেক ছোট একটি মেয়ে সমাজের পরিচিত এক মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ নিয়েছিল। গৃহকর্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে মৃত্যু বরণ করেছে। মেয়েটিকে লেখাপড়া শিখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছিলাম। শালীন পোষাক পড়া মেয়েটি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অগ্নিদগ্ধ লাশ হয়ে ফিরে এসেছে। ধর্ষণের স্বীকার ছোট ১০ বছরের মেয়েটি তার পরীক্ষার হলে সন্তান প্রসব করেছে।

ভালোবাসা মানে একজন আরেকজনকে গভীরভাবে জানা। যে জানার মাঝে কোনো বিকৃত চাওয়া থাকবেনা। ভালোবাসার অনুভব হবে নতুন কিছু সৃষ্টি করার। যে সৃষ্টি প্রেমকে অমর করে রাখবে। ধর্ষণ,এসিড নিক্ষেপ, সবরকম অন্যায় অবিচার, হিংসা, আত্ম অহংকার আমাদের নতুন প্রজন্ম ঘৃণা করবেন আপন ভালোবাসার শক্তি দিয়ে। এই ভালোবাসা দিবসটিকে আমি অনেক ব্যাপকভাবেই চিন্তা করি। ভালোবাসা দিবস আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমি ঘরের বৃদ্ধ মা বাবার প্রতি যত্ন করছি কিনা? নাকি আমার মা বাবা বৃদ্ধাশ্রমে রাত্রিযাপন করছেন।আমরা আমাদের মা বাবাকে ভালোবাসব। যে বাসায় অথবা যে বাড়িতে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকেনা সেখানে ভালোবাসার অভাবে সন্তানগুলো বিপদে পরিচালিত হবে। ভালোবাসা না পাওয়া সন্তানগুলো যে কোনো দুর্ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই আমি মনে মনে মহান স্রষ্টাকে বলি ওহে প্রিয়তম তুমি তোমার সৃষ্টির সবকিছু দিয়ে আমাদের ভালোবাসার শিক্ষা দিচ্ছ। আমাদের কি এত শক্তি আছে এই ভালোবাসার মাহাত্ম্য বুঝার বা জানার। তোমার কাছে মিনতি করছি এই ভালোবাসা থাকুক বাড়িতে, সমাজে, রাষ্ট্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, নিজের কর্ম প্রতিষ্ঠানে। আমি প্রার্থনা করছি এই ভালোবাসা থাকুক মানুষে মানুষে। সবাই সবাইকে জানুক, বুঝুক। আমাদের প্রেম আর অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে দেখার চেষ্টা করব। আমাদের ক্ষনিকের জীবনে কিছু কাজ করে যেতে হবে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম কিছু জানতে পারে, কিছু শিখতে পারে। ভালোবাসার শক্তি দিয়ে আমাদের মনোবলকে বৃদ্ধি করব যাতে আমরা মানবতার জন্য কাজ করতে পারি। আমার প্রতিবেশী বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে যেন দাঁড়াতে ভালোবাসার চেতনায়।

সেবা করার মন মানসিকতা আমাদের অল্প বয়স থেকে সৃষ্টি করতে হবে। আমরা প্রতিদিন নিজের জন্য কত কিছু করছি। নিজ পরিবারের সুখের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করছি। নিজের সন্মান বৃদ্ধির জন্য মাঝেমধ্যে অনেক টাকা অপব্যয় করে থাকি। আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু টাকা যদি মানবসেবার কাজে ব্যয় করি তাহলে কিছু মানুষের উপকার হয়। প্রতিবেশী যদি ভাল না থাকে সমাজে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। নিজের কাছে জমাকৃত অর্থ তখন কলংকমুক্ত হবে যখন দেখা যাবে এই অর্থের একটি অংশ মানব কল্যানে ব্যয় হয়। আমরা অনেকে আছি মানবসেবার উপর সুন্দর বক্তব্য রাখি কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় আমাদের কথার সাথে কাজের মিল নাই। যা খুবই বেদনাদায়ক।

আমরা শুধু নিজের জন্য জন্মগ্রহণ করি নাই। সকলকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, ছোট-বড় এর মধ্যে ভালবাসা, সহানুভূতি সহমর্মিতা শত শত বছর ধরে বিদ্যামন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দেশের প্রধান সংস্কৃতি হয়ে গেছে। একটি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের প্রাণ। ভালোবাসা দিবসে আমাদের ভাবতে হবে সংস্কৃতিকে জীবন্ত রেখে আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব। দেশের মানুষকে ভালোবাসব। ভালোবাসা দিবস সবার জীবন সুখময় করুক।
তাই মানুষের চিন্তা চেতনার মধ্যে এমন কিছু থাকা দরকার যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালো কিছু গ্রহণ করতে পারে। ভালোবাসার বারিধারায় সিক্ত হোক আমাদের এই পৃথিবী। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালন করব। সেই ভালোবাসা হোক মহান স্রষ্টার প্রতি, সেই ভালোবাসা হোক আর্তনাদ করা অসহায় মানুষের প্রতি।

কোটি কোটি মানুষ ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করে। বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান সময়ে এসে ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের কদর প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের ফুলের দোকানগুলোতে ফুল বিক্রি খুব বেশি বেড়ে যায়। বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এই দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে। ভালোবাসা দিবসের জন্য মানুষেরা কার্ড, ফুল, চকোলেট ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী ক্রয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনে কয়েক কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। আমাদের বুঝতে হবে মানুষকে ভালোবাসার মাঝে এক আনন্দ আছে। নিজে বাঁচব পাশাপাশি আরেকজন মানুষের কথা চিন্তা করব। যতদূর পারা যায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িনোর মধ্যে আনন্দ আছে। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়ে থাকে।

  • রূপম চক্রবর্ত্তী
    প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট